Tuesday, November 11, 2025

জামায়াতের ইসলাম আর আমাদের ইসলাম এক নয় : হেফাজত আমির

আরও পড়ুন

জামায়াত ছাড়া সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, ‘জামায়াতের ইসলাম আর আমাদের ইসলাম এক নয়। আমরা মদীনার ইসলাম পালন করি তারা মওদুদীর ইসলাম পালন করে।’

শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দাওয়াতুল ইহসান বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘কওমি মাদ্রাসার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজত আমির এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমি অতীতেও বহুবার এই আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়— এখনো সেই ঐক্যের পরিবেশ তৈরি হয়নি। তাই আমার পরামর্শ হলো— ইসলাম ও ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত কখনো গ্রহণ করবেন না। আমাদের দেশের মসজিদ, মাদ্রাসা, দাওয়াত-তাবলিগ, তাসাউফ ও সুলুকের কাজ যেন কোনো বিদেশি চাপ বা অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়— এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, আমরা এমন এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি, যখন একদিকে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধের ওপরও নানামুখী আঘাত আসছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই— সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশ বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ধর্মীয় মূল্যবোধের জন্য এক অশনি সংকেত। এটি ইসলাম ও বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। আমি দেশপ্রেমিক ও ইসলামপ্রেমী জনগণের পক্ষ থেকে এই চুক্তির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

আরও পড়ুনঃ  ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কত ধানে কত চাল, জনগণ তা হাড়ে হাড়ে টের পাবে’

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি— আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার মূলভিত্তি হলো কুরআন ও সুন্নাহ, এবং সাহাবায়ে কিরাম রা. ও সালফে সালেহীনের পথ অনুসরণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ইসলামের এই বিশুদ্ধ ঐতিহ্য থেকে সরে গিয়ে নতুন নতুন মতবাদ প্রচার করছে।

বিশেষ করে জনাব আবুল আলা মওদূদী তার লেখনিতে এমন কিছু ধারণা উপস্থাপন করেছেন, যা আহলে সুন্নতের মূলধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে তার মন্তব্য এবং ইসলামী রাজনীতির ব্যাখ্যা বহু ক্ষেত্রে ইসলামের ঐতিহ্যবাহী ব্যাখ্যার বিপরীত। এ কারণে আকাবিরে দেওবন্দ— স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন— ‘মওদুদী সাহেবের চিন্তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলাম কেবল একটি রাজনৈতিক মতবাদ নয়; বরং এটি আখলাক, তাযকিয়া ও ইলমে ওহীর উপর প্রতিষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা।’

আরও পড়ুনঃ  দুর্যোগ প্রবন কয়রার অসহায় মানুষের কল্যানে কাজ করতে হবে: বাপ্পী

তাই আমি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ দেশের সব ইসলামি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি— আসুন, আমরা সবাই আকিদা ও মানহাজের একত্ব বজায় রেখে এক হই। যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে, যারা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে অসম্মানজনক ধারণা পোষণ করে— তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী সবসময় ইসলামের শেকড় উৎপাটনের মিশনে লিপ্ত। আমাদের কাছে ইসলাম এসেছে সাহাবায়ে কেরামের মাধ্যমে। মওদুদির গোটা জীবন কেটেছে সেই সাহাবায়ে কেরামকে বিতর্কিত করার কাজে। সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি স্বীকার না করা হলে এবং তাদেরকে বিতর্কিত করা গেলে কুরআন ও হাদিস বিতর্কিত হয়ে যাবে। জামায়াতে ইসলামী সাহাবায়ে কেরামকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে কুরআন ও হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। এজন্যে বিশ্বের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের ফতোয়া হলো, জামায়াতে ইসলামীর ইসলাম মদিনার ইসলাম নয়। তারা মওদুদির ইসলামের অনুসারী।

আরও পড়ুনঃ  খালেদা জিয়াসহ বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন ১০ নারী

মওদুদীবাদের সমালোচনা করে হেফাজত আমির বলেন, মওদুদির ফেতনা কাদিয়ানিদের ফেতনা থেকেও ভয়ংকর। কারণ, কাদিয়ানিজম হলো ইসলামের বাইরের ফেতনা। যা সবাই সহজে চিনতে পারে; কিন্তু মওদুদিজম হলো ইসলামের ঘরের ফেতনা। যেই ফেতনার ভয়াবহতা সবাই ধরতে পারে না।

হেফাজত আমির বলেন, কওমি মাদ্রাসাগুলো শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়— বরং ইসলামী সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনার ধারক-বাহক। তাই এর ঐতিহ্য সংরক্ষণ, পাঠ্যসূচির উন্নয়ন ও শিক্ষকদের সম্মান রক্ষায় আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

দাওয়াতুল ইহসান বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা আবদুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম আল্লামা ইলিয়াস গুম্মান, হেফাজত মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, উজানীর পীর মাওলানা মাহবুবে এলাহী, মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ