মানিকগঞ্জের শিবালয়ে মা-মেয়ে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন এবং আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রেমঘটিত দ্বন্দ্ব আর বিয়ের চাপ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে গ্রেপ্তার ব্যক্তি। মেয়ে মরিয়মের লাশ এক দিন পর উদ্ধার হলেও এখনও পাওয়া যায়নি মা স্মৃতিকে।
পুলিশের কাছে অভিযুক্ত সুজন স্বীকার করে প্রথমে শ্বাসরোধে প্রেমিকা সিথি আক্তার স্মৃতিকে (২৩) হত্যার পর পাটের বস্তায় লাশ ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। এর পর স্মৃতির ওড়না দিয়েই তাঁর তিন বছর বয়সী মেয়ে মরিয়মকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয় সুজন শেখ (২৭)। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তৎপরতায় হত্যার মূল আসামি সুজন শেখকে গত ২৯ অক্টোরব টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুলল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন, শিবালয় থানার ওসি কামাল হোসেন।
পুলিশের ভাষ্য, আদালতে ১৬৪ ধারায় সুজনের জবানবন্দিতেই উঠে এসেছে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের চিত্র। গত ২৪ অক্টোবর ভোরে যমুনা নদীতে মাছ ধরার পর বাড়ি ফেরার পথে জেলে আব্দুর রাজ্জাক জানতে পারেন, তাঁর তিন বছর বয়সী মেয়ে মরিয়মের লাশ পাওয়া গেছে নদীপারের জামাল মিয়ার পেয়ারা বাগানের পাশে। গলায় ওড়না পেঁচানো, নিথর ছোট্ট মরিয়ম পড়ে আছে নদীপারে। একই সময়ে রাজ্জাকের স্ত্রী সিথি আক্তার স্মৃতিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন তিনি।
ঘটনার পরপরই তদন্তে নামে শিবালয় থানার পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে গত ২৯ অক্টোবর সুজনকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সুজান জানায়, স্মৃতি আক্তারের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে অন্যত্র বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্মৃতি ফোনে একাধিকবার হুমকি দিয়ে বলেন, বিয়ে না করলে তার বাড়িতে গিয়ে উঠবেন। এতে ভয় পেয়ে দুনিয়াতে থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আটেন সুজন। ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যার পর সুজন কৌশলে মোবাইল ফোনে স্মৃতিকে যমুনা নদীর পারে স্থানীয় জামাল মিয়ার পেয়ারা বাগানে ডেকে নেয়। দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে প্রথমে শ্বাসরোধ করে স্মৃতিকে হত্যা করে পাটের বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। এর পর স্মৃতির ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে স্মৃতির মেয়ে মরিয়মকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। শিশুটির লাশ নদীর স্রোতে ভেসে তীরে চলে আসে। এর পর স্থানীয়রা দেখে খবর দেয় পুলিশসহ পরিবারকে। কিন্তু আট দিন অতিবাহিত হলেও স্মৃতি আক্তারের লাশের কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সুজনের দেখিয়ে দেওয়া স্থানে কয়েক দফায় অভিযান চালিয়েও স্মৃতির লাশের সন্ধান পায়নি।
তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযুক্ত সুজন পরিকল্পিতভাবে মা-মেয়েকে হত্যা করেছে। সুজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন স্মৃতির স্বামী। নিখোঁজ স্মৃতির লাশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন।
