Tuesday, November 11, 2025

ধর্ষক আনিসুর রহমান খোকন মাদারীপুর-৩ আসনের বিএনপি’র প্রার্থী

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনের মনোনীত প্রার্থী আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের বিরুদ্ধে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর উত্তরখান থানাধীন চামুরখান এলাকায়। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩)-এর ৯(১) ধারায় দায়ের করা হয় এবং আদালতের নির্দেশে উত্তরখান থানায় মামলা নং-১(১১)২৫ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) দুপুরে রজধানীর একটি হোটেলে ভুক্তভুগি নারী এ অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারীর পরিবার জানায়, ২২ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে বাংলাদেশ আই হসপিটালের সামনে আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের নিজস্ব গাড়িতে উঠতে বলেন ওই নারীকে। পরবর্তীতে সকাল ১১টার দিকে তিনি ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে উত্তরখানের চামুরখান এলাকার ‘তালুকদার বাড়ি’ নামে একটি ফ্ল্যাটে যান। সেখানে চাকরির শর্তের কথা বলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনৈতিক প্রস্তাব দেন। নারী প্রতিবাদ জানিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হতে চাইলে তাকে জোরপূর্বক রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, নারীকে জোরপূর্বক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা হয়।

ঘটনার পর অসুস্থ অবস্থায় ভুক্তভোগী নারী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, এটি “পুলিশ কেস”, তাই থানার মাধ্যমে ধর্ষণ পরীক্ষা করতে হবে। পরামর্শ অনুযায়ী ভুক্তভোগী নারী থানায় যান, কিন্তু তখন পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতের মাধ্যমে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি রুজু হয়।

আরও পড়ুনঃ  হানিফ ও ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি “আমার বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের কাছে অনুরোধ করছি এই মামলায় যেন কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে না পারে।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রভাব খাটিয়ে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের মাধ্যমে মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পরিবারের দাবি, মামলাটি তুলে না নিলে ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর দুই কন্যা সন্তানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভুগি নারী বলেন,“অভিযুক্ত খোকন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর জেলার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর ঘনিষ্ঠ। তিনি এ সুযোগে ভয় দেখাচ্ছেন যে মামলা তুলে না নিলে আমাদের মেরে ফেলবেন, সন্তানদের ক্ষতি করবেন। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” তিনি আরও যোগ করেন,“আমরা রাজনীতি করি না, কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেও নেই। আমরা শুধু চাই, সত্য প্রমাণিত হোক এবং বিচার হোক।”

আরও পড়ুনঃ  নির্বাচনের আগে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট-২’ চালানো হবে

ভুক্তভোগি পরিবার আরও বলেন, “প্রভাবশালী হওয়ায় ভয় পাচ্ছি, আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়,“অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলমান অবস্থায় তিনি যেন দলের কোনো পদে দায়িত্ব পালন না করেন। তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার স্বার্থে তাঁকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।” পরিবারটি দাবি করে, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা বারসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রভাব বিস্তার করে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

চিকিৎসকরা ভুক্তভোগী নারীকে “ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)” এ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। আদালত উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ভুক্তভোগী নারী সামাজিকভাবে ভীষণ হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। আশপাশের লোকজনের কটূ মন্তব্য ও ভয়ভীতিতে তিনি ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন। তাঁর দুই কন্যা সন্তান রয়েছে, যারা এ ঘটনায় মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

ওই নারী আরো বলেন,“ধর্ষণের মতো ঘটনায় একজন নারী শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ে। সমাজ তাকে বিচার করে, কিন্তু অপরাধীকে করে না। আমরা শুধু রাষ্ট্রের কাছে চাই এই অন্যায়ের বিচার।” ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্য আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “আমরা কোনো দল দেখি না, কোনো ক্ষমতা দেখি না। আমরা শুধু ন্যায়বিচার দেখতে চাই।”

আরও পড়ুনঃ  যেভাবে প্রার্থী বাছাই করল বিএনপি

এ ব্যাপারে মাদারীপুর-৩ আসনের দলের মনোনীত প্রার্থী আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেনি। এমকি খুদেবার্তা পাঠিয়ে উত্তর মেলেনি।

তবে পুলিশ ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। দক্ষিনখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন,“ঘটনাটি আমাদের কাছে মিথ্যা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, ওই নারী কোনো ব্যাক্তির কাছে প্রভাবিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি ঘটনাস্থল সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি এবং সহযোগিতাও করেননি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করা হয়েছে, তবে ওই এলাকায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।” মামলাটি বর্তমানে উত্তরখান থানা পুলিশ তদন্ত করছে।

ভুক্তভোগী নারী সংবাদ সম্মেলনে বলেন,“ধর্ষণের মতো ঘটনায় একজন নারী শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ে। আমরা চাই শুধু সত্য উদঘাটিত হোক এবং বিচার হোক।”

উল্লেখ্য, সোমবার (০৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে মনোনীত করেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ