দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে চালু হয়েছে খুলনার আধুনিক কারাগার। শনিবার (১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কারাগারটি চালু করা হয়। এ সময় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনটি প্রিজন ভ্যানে করে বন্দিদের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
জেলা কারাগারের প্রথম ১০০ কয়েদিকে নতুন করাগারে গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
বন্দিদের নতুন কারাগারে স্বাগত জানান, খুলনা বিভাগীয় কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) মো. মনির আহমেদ, খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, ডেপুটি জেল সুপার আব্দুল্লাহ হেল আল আমিন, জেলার মুহাম্মদ মুনীর সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কারা উপমহাপরিদর্শক মনির আহমেদ বলেন, পুরাতন কারাগার থেকে ১০০ জন কয়েদিকে নতুন কারাগারে আনা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বন্দির সংখ্যা বাড়বে। ভবিষ্যতে মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিরা পুরাতন কারাগারে থাকবে। আর এখানে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের বন্দিরা থাকবে। এখানে বন্দিরা খোলামেলা পরিবেশে ভালো থাকবে।
তিনি বলেন, ধারণ ক্ষমতার বাইরে বন্দিরা থাকে-এই অভিযোগটা খুলনায় থাকবে না। এখানে হাসপাতাল আছে, সমাজ সেবার অফিস, লাইব্রেরি আছে, ডে কেয়ার সেন্টারসহ অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা এখানে দেওয়া হবে। আত্মকর্মসংস্থানমূলক অনেক কাজ হবে এখানে।
জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, পুরাতন কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৬৭৮ জনের। সেই তুলনায় আজ ১ হাজার ৪৯৩ বন্দি রয়েছে। বন্দি বেশি থাকায় জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। আর এখানে ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার, প্রস্তাবিত রয়েছে আরও ২ হাজার। ভবিষ্যতে ৪ হাজার বন্দি রাখার ব্যবস্থা হবে। ভেতরে ও বাইরে স্থাপনা রয়েছে ৫৭টি। এরমধ্যে বন্দিদের জন্য থাকার জায়গা আছে ১১টি। পুরাতন জেলখানার জায়গা ৫.৭১ একর। আর এখানে ৩০ একর জায়গা। পুরাতন কারাগারের ভেতরে ৩ একর আর এটার ভেতরেই ১৫ একর জায়গা।
এ ছাড়া, জায়গা বেশি থাকায় বন্দিরা স্বাচ্ছন্দে থাকবে। নারী এবং পুরুষদের জন্য আলাদা ডিভিশন রয়েছে। চিকিৎসার জন্যও আলাদা ইউনিট রয়েছে। রান্নার ব্যবস্থাও আলাদা, কাশিমপুর ছাড়া অন্য কারাগারে এই ব্যবস্থা নেই। এক এলাকার বন্দি আরেক এলাকায় যেতে পারবে না। উচ্চমানের ফাঁসির মঞ্চ রয়েছে। চতুর্দিকে ঘেরাও আছে। কারা রক্ষিদের জন্যও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ৩০০ জন কারারক্ষির জন্য আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্কুল আছে। এখানে সবাই ভালো থাকবে।
তিনি বলেন, কারাগারটি ১২-১৩ বছর পরে চালু হলো। অনেক আগে থেকে বিল্ডিংগুলো তৈরি করা ছিল। মেরামতের প্রয়োজন রয়েছে। এখন এটি ব্যবহার হলে বুঝতে পারবো কি কি সমস্যা আমরা ফেস করছি। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ২০১১ সালে একনেক সভায় ১৪৪ কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেটে খুলনা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। সময়সীমা ও ব্যয় দুইবার সংশোধনের পর প্রকল্পটির চুড়ান্ত ব্যয় দাঁড়ায় ২৮৮ কোটি টাকা। রূপসা ব্রিজ-সংলগ্ন খুলনা সিটি বাইপাস সড়কের পাশে ৩০ একর জমিতে নির্মিত এই আধুনিক কারাগার কমপ্লেক্সে রয়েছে পাকা রাস্তা, রঙিন ভবন, পার্কিং টাইলসের ফুটপাত, মসজিদ, হাসপাতালসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। বন্দিদের জন্য নির্মিত প্রতিটি ভবনের চারপাশে রয়েছে পৃথক সীমানাপ্রাচীর, যাতে এক শ্রেণির বন্দি অন্য শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। বন্দিদের থাকার জন্য ১১টি ভবনসহ মোট ৫৭টি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো প্রাঙ্গণজুড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীর তোলা হয়েছে। কারাগারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নির্মিত হয়েছে দেশের ‘সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ’, যা ছাই রঙের টিনের ছাউনি ও ঢেউটিনের কাঠামোয় নির্মিত।
মোহাম্মদ মিলন/এএমকে
