নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগে সর্বোচ্চ কোনো কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করতে পারতো। তবে এবার অনিয়ম হলে ইসি পুরো নির্বাচনি এলাকার ফলাফল বাতিল করতে পারবে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন বিধান রেখেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে সরকার। সোমবার আইন মন্ত্রণালয় এ অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
অনুচ্ছেদ ৯১ এ বলা হয়েছে, অনিয়মের জন্য কেন্দ্রের ভোট বাতিলের পাশাপাশি প্রয়োজন হলে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফল বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ইসিকে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান রয়েছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমের পাশাপাশি ইসির ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিধান রয়েছে। হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে ইসিকে ভোটের পরেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন যেসব বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে তা উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করে। দলগুলোর দাবির মধ্যেও এরপর আর কোনো পরিবর্তন আসেনি। উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির সই হলে তা সংশোধন অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তাতে একগুচ্ছ পরিবর্তনের পাশাপাশি যোগ হয়েছে নতুন বিধানও। এই সংশোধিত আরপিও ধরেই শিগগিরই দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন।
নতুন আরপিও অনুযায়ী, আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি ভোট করতে পারবেন না এমন বিধান যোগ হয়েছে এবার। দেড় দশক পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যেমন সশস্ত্র বাহিনী ফিরেছে,
তেমনই ‘না’ ভোট ব্যবস্থা এবার এসেছে একক প্রার্থীর আসনে। সমভোট পেলে হবে পুনঃভোট, জোটে করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলের মার্কায়, জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা পুনর্নিধারণ, দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা, আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা, অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের বিধান, এআইয়ের অপব্যবহারকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য (ভোটে অযোগ্য এমন) দিলে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে আরপিওতে বলা হয়েছে।
২ নম্বর অনুচ্ছেদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। গত তিন নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ছিল সশস্ত্র বাহিনী। এবার সংশোধন হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও দৃশ্যমান হতে পারে।
৮ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করে ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে রাখা হয়েছে। তারা তালিকা করে কমিশনের অনুমোদন নেবেন।
৯ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করা হয়েছে; রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা ইসিকে অবহিত করতে হবে।
১২ নম্বর অনুচ্ছেদে যুক্ত করা হয়েছে আদালত কাউকে ফেরারি বা পলাতক
পলাতক আসামি প্রার্থী হতে পারবেন না আরও যেসব পরিবর্তন এলো আরপিওতে
নিবন্ধিত দল জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে
আসামি ঘোষণা করলে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন। ফলে পলাতক আসামি প্রার্থী হতে পারবেন না এবার।
সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলেও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদকে ‘লাভজনক’ পদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে আরপিওতে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদে থেকে ভোটে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না।
হলফনামায় দেশে এবং বিদেশে আয়ের উৎস থাকলে তা জানাতে হবে; দাখিল করতে হবে সবশেষ বছরের রিটার্ন।
প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য সংক্রান্ত হলনামায় অসত্য তথ্যের প্রমাণ পেলে ভোটের পরেও ইসির ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।
১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া জামানতের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
