Tuesday, November 11, 2025

প্রচারণায় প্রথমবারের মতো নিষিদ্ধ পোস্টার, ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

আরও পড়ুন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারে পোস্টার, ড্রোন ও বিদেশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি ২০২৫’ গেজেট আকারে জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত ১০টার পর নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার এ প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

ইসি জানিয়েছে, নতুন আচরণবিধিতে পরিবেশবান্ধব প্রচার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) অপব্যবহার বন্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী ও দলের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে কমিশনের হাতে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে কড়াকড়ি

প্রার্থী, নির্বাচনি এজেন্ট বা দল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবে, তবে একাউন্টের নাম, আইডি, ই-মেইল ও অন্যান্য তথ্য আগে থেকেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার, ঘৃণাত্মক বক্তব্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য বা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে চেহারা বিকৃতি ও মানহানিকর কনটেন্ট তৈরি-প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহার, নারী বা সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে উসকানিমূলক ভাষা, কিংবা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়ানোকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

আরও পড়ুনঃ  আওয়ামী লীগের সবাই দেশপ্রেমিক দলকে ভোট দেবে: মির্জা আব্বাস

পোস্টার-ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোটের প্রচারে কোনো পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন, যার দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট ও প্রস্থ ৯ ফুটের বেশি নয়। নির্বাচনের দিন ও প্রচারকালে ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ভোটার স্লিপে প্রার্থীর নাম, ছবি, প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। কেবল নির্ধারিত ফরম্যাটে বিতরণ করা যাবে স্লিপ।

আরও পড়ুনঃ  জাতীয় নির্বাচনের প্রচার শুরু করল সরকার

প্রচারে পরিবেশবান্ধব নির্দেশনা

ইসি পরিবেশ রক্ষায় প্রচারে পলিথিন, রেকসিন ও পিভিসি ব্যানার নিষিদ্ধ করেছে। শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেল এর মধ্যে রাখতে হবে এবং আলোকসজ্জা কেবল ডিজিটাল বিলবোর্ডেই সীমিত থাকবে। অতিরিক্ত আলোকসজ্জা ও বিদ্যুতের অপচয় এড়াতে সাধারণ বিলবোর্ডে আলো ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিদেশে প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী বিদেশে সভা, সমাবেশ বা প্রচারণা করতে পারবে না। এছাড়া সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেমন—অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।

প্রার্থী-দলের অঙ্গীকারনামা বাধ্যতামূলক

সব প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলকে আচরণবিধি মানার জন্য অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। ‘গুরুতর অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আরপিও ৯১ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিলের বিধানও রাখা হয়েছে, যা এবার প্রথমবারের মতো আচরণবিধিতে স্পষ্টভাবে যুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  দেশের জনগণ এখন নির্বাচনমুখী, নির্বাচন নিয়ে কোনো হুমকি নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এক মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণার সুযোগ

রিটার্নিং কর্মকর্তার উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট আসনের সব প্রার্থীকে নিয়ে এক মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে ভোটাররা একই আসনের সব প্রার্থীর অঙ্গীকার একসঙ্গে জানতে পারবেন বলে ইসি আশা করছে।

নির্বাচনি সংস্কারের চূড়ান্ত ধাপ

আরপিও সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব আইনি কাঠামো হালনাগাদ করার পর এই আচরণবিধি জারির মাধ্যমে ইসির নির্বাচনি আইন সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হলো।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ